প্রথম অংক-প্রথম দৃশ্য:
(সিনিয়র রিপোর্টার আবেদ রহমানের রুমে ঢুকলেন রিপোর্টার সাঈদ)
সাঈদঃ আবেদ ভাই আমাকে ডেকেছেন?
আবেদঃ হ্যাঁ সাঈদ। সেদিন আমার এক বন্ধু তোমার প্রশংসা করছিলো। নতুন রিপোর্টার হিসেবে তুমি ভালো কাজ করছো। যা হোক যে জন্য তোমাকে ডেকেছিলাম, আগামী মাসের ১ তারিখে ডাবতলায় ছাত্র সমাবেশ হবে। ঐ সমাবেশ সম্পর্কে তুমি নিউজটি করবে। আমি দেখে তা’ পেপারে ছাপিয়ে দেব।
সাঈদঃ সম্পাদক স্যার কি এসব নিউজ বেশি পছন্দ করেন?
আবেদঃ তা’ বলতে পারবো না। তবে স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে যে সব খবর আসে তা’ খবরের গুরুত্ব বুঝে প্রকাশ করা হয়। আর এটা জাস্ট সংগঠন সংবাদের মতো। কেন তুমিতো এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ১৫ আগস্ট, ১ মে’র মতো অনেক দিবসেই সংগঠন সংবাদের নিউজ করে দিয়েছো।
সাঈদঃ ভাই আমাকে বার্তা বিভাগ থেকে দিয়ে অন্য বিভাগে দেয়া যায়? এখানে মায়ের কথা মনে পড়ে গেলেই খারাপ লাগে। মনে হয়,,,,,,,
আবেদঃ তুমি হিন্দু না মুসলিম, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান এটা বড় নয়। কে তোমার পিতা কেউ এটা দেখতে যাবে না। তুমি পত্রিকার একজন ভালো রিপোর্টার এটাই তোমার বড় পরিচয়। তুমি একজন গণমাধ্যমকর্মি আমি তা’ই মনে করি। তোমার পিতা ভালো না মন্দ তা’ দিয়ে তোমার ক্যারিয়ারের কিছুই আসে যায় না। কবি কামিনী রায়ের কবিতায় কি কথা বলেছিলেন মনে আছে?
‘করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্পে সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।’
সাঈদ তোমার রুমে যাও। আর নিউজ কাভারেজে যাবার সময় আমার টাই নিয়ে যেও।
(সাঈদের প্রস্থান)
পাতা-১
দ্বিতীয় দৃশ্য:
(সাঈদ কর্মস্থলের উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তায়।)
করিমঃ সাঈদ! সাঈদ!
সাঈদঃ কি হয়েছে করিম?
করিমঃ কাল রাতে সোনাই মন্ডলের বাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ দশ-পনের লাখ টাকার মালামাল নতুন কায়দায় চুরি হয়েছে। মন্ডল চাচা তোকে দেখা করতে বলেছে।
সাঈদঃ তুই বাড়ি যা, আমি পরে এক সময় চাচার সাথে দেখা করব। এখন অন্য একটা কাজে যাচ্ছি।
(কিছুদূর পথ হাঁটার পর একজন শিক্ষকের সাথে দেখা)
সাঈদঃ আসসালামু আলাইকুম, স্যার।
শিক্ষকঃ (উত্তর নিয়ে) সাঈদ পিয়ন দিয়ে তোমার কাছে আমাদের একটা রসায়ন পড়ানোর শিক্ষকের খুব প্রয়োজন তা’ লিখে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। প্রকাশিত হবে কবে নাগাদ? জানোই তো আলাউদ্দিন ভাই মারা যাবার পর, কেউ তো আর সেভাবে হাল ধরেননি। পত্রিকায় সংবাদ হলে সবার টনক নড়ে আর কি।
সাঈদঃ স্যার ওটা সম্পাদনা করে রেখে দিয়েছি। অল্পদিনেই প্রকাশ হয়ে যাবে।
শিক্ষকঃ সাঈদ, আমাদের প্রধান শিক্ষক সাহেবের অবসর উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি আগামী মাসের ১১ তারিখ সকালবেলায়। তুমি এসে অবশ্যই রিপোর্ট করে পত্রিকা অফিসে দিয়ে দিবে। তা’ যাচ্ছ কোথায় এখন?
সাঈদঃ ডাবতলার ছাত্র সমাবেশে।
শিক্ষকঃ ঠিক আছে যাও। বিকেলে এসো আরো অনেক কথা আছে।
(উভয়ের প্রস্থান)
দ্বিতীয় অংক-১ম দৃশ্য:
(ছাত্র সমাবেশে)
ঘোষকঃ এবারে বক্তব্য রাখবেন এই সমাবেশের বিশেষ ও শেষ বক্তা আপনাদের সুপরিচিত, সুদর্শন ও স্মার্ট, হিতৈষী ছাত্রনেতা হুমায়ন কবির বিপ্লব ভাই।
আমার ভাই তোমার ভাই বিপ্লব ভাই বিপ্লব ভাই (শ্লোগান ও প্রতি উত্তর)।
বক্তব্যর ভাষাঃ
সমাবেশের শেষ বক্তা আমি। অনেক্ষণ যাবৎ আপনারা অনেকেরই বক্তব্য শুনেছেন। আপনারা অনেকেই বিরক্ত বোধ করছেন বুঝতে পারছি। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি এখনো বক্তব্য দিলে সারাদিন আপনাদের বসিয়ে রাখতে পারব।
পাতা-২
আমার পূর্বের বক্তারা সমাবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেছেন। তাই ঐ বিষয়টা আবার বললে আমার মাথার উপর পচা ডিম পড়তে পারে। যদিও এ তল্লাটে কোন শালার বুকের পাটা নাই আমার মুখে পচা ডিম ছুঁড়ে।
যাই হোক আমি আমার বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না। অনেক বক্তা রয়েছেন তারা তাদের বক্তৃতার মাঝে বলেছেন, আমি আমার বক্তৃতাকে দীর্ঘায়িত করব না। সেই বক্তাই তার বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করেছেন। কিন্তু আপনারা জানেন আমি আপনাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্রনেতা হুমায়ুন কবির বিপ্লব। যদি আমি বিপ্লব হয়ে থাকি তাহলে, আমি দেখবেন বিপ্লব ঘটিয়ে দেব। আমি বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করব না। শুধু বুঝি হিন্দু, মুসলিম দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে দেশে কোন উন্নতি হবে না। তাই, এই এলাকায় সবাই মিলে মিশে বসবাস করতে হবে।
সাধারণ মানুষের তথা ছাত্র ভাইদের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে আমি অঙ্গীকারাবদ্ধ। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যদিও অনেক প্রার্থী রয়েছেন। তবুও বলব নির্বাচনে আমি কোন দল থেকে না লড়ে স্বতন্ত্র থেকে প্যানেল দেব। সুখী ও সমৃদ্ধশালী এলাকায় পরিণত করব ডাবতলা; ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনেরা মাথা উঁচিয়ে চলতে পারবে। আমি এবং আমার সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে কোন স্বজন-প্রীতি থাকবে না। স্বতন্ত্র, স্বতন্ত্রই এ কথা আমি বুঝিয়ে দেব হাড়ে হাড়ে সবাইকে। আমার বাবা একাত্তরে পা হারিয়েছেন। আর আমি ২০২১ সালে পঞ্চাশ বছর পর এ যুগের নব্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে জান দিতে প্রস্তুত আছি।
বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না। বক্তব্য শেষ করার পূর্বে বলব, সব কিছু মুখে বলা সম্ভব না। অনেক কিছু অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়। আমি আপনাদের সেবায় শ্রমিকের মতো কাজ করে যাব। শেষে একটি কথাই বলে যেতে চাই তা’ হলো আমি যদি ছাত্রনেতা বিপ্লব হই তাহলে দেশে অচিরেই বিপ্লব দেখা দিবে। আল্লাহ হাফেজ। বাংলার মঙ্গল হোক। (প্রস্থান)
ঘোষকঃ এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই আজকের ছাত্রসমাবেশ সমাপ্ত করা হলো। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
দ্বিতীয় দৃশ্য:
গান গাইতে যাচ্ছিল বিপ্লব (,.,.,.,.,.,.,)
সাঈদঃ হুমায়ুন কবির শোন।
বিপ্লবঃ আরে সাংবাদিক যে! বলেন, কী জানতে চান?
সাঈদঃ বক্তৃতায় অনেকেই মিথ্যা কথা বলে তাতে কোন আসে-যায় না। ...... কিন্তু তুমি আজ যা বলেছো তা’ শুনে না এসে পারলাম না।
বিপ্লবঃ বলেন কি বলছি; আপনার পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলি নাই। (গ¤ী¢রভাবে)
পাতা-৩
সাঈদঃ বলেছো, তুমি আমার পরিচয় কেন গোটা বাঙালীর পরিচয়কে অবমাননা করেছো। রাজাকারদের দোসরের সন্তান হয়ে তুমি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে পরিচয় দিতে চাইছো। তোমার বাবার কেন পা কাটা গেছে তা’ নতুন প্রজন্ম ছাড়া সবাই কম-বেশি জানে। তুমি একজন ঘৃণ্য মানুষ। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার আত্মা তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছে।
বিপ্লবঃ ব্যস, কোনটা উচিৎ কোনটা অনুচিৎ তা তোমার মতো দ’ুপয়সার জারজ রিপোর্টারের কাছ থেকে শিখতে হবে না।
সাঈদঃ তোমার এই উঁচু গলা, ক্রোধ আর অহংকার সব মিশিয়ে যাবে সাংবাদিকের সাধারণ কলমের কাছে।
বিপ্লবঃ যাও যাও, আমার নাম বিপ্লব; দেশে বিপ্লব ঘটিয়ে দেব।
সাঈদঃ বাবার মতো হাজারো শহীদের রক্ত আজ বিফলে যেতে বসেছে। কিন্তু, রক্ত দান করলেও রক্ত শেষ হয়ে যায়নি। সত্যর আদর্শে অনুপ্রাণিত উজ্জীবিত তরুণ দেহমনকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। যে হাত তুমি রেখেছো রক্ত্যক্ত পবিত্র দেশের মাটিতে, মানুষের অনুভূতিতে। সে কলুষিত দূর্গন্ধযুক্ত হাত প্রবেশ করতে দেব না। (সাঈদের প্রস্থান)
বিপ্লবঃ দেবে না মানে, আমি যে তোমার মাটির ঘ্রাণ নেবই নেব। আমার রাজাকার বাবার ঠ্যাং তোমার মা কেটে দিয়েছে তাও জানি। তাইতো তোমার মা-কে মিলিটারির হাতে তুলে দেয়া হয়! শুননা ফেলাইল নাকি কেউ? (প্রস্থান)
তৃতীয় দৃশ্য:
(বস বসে আছেন, বিপ্লবের প্রবেশ)
বিপ্লবঃ বস চলে এলাম?
নেতাঃ হ্যাঁ আয়।
বিপ্লবঃ খটকায় পড়েছি বস।
নেতাঃ তুই না একটু আগে ধমক খেয়ে বেরুলি?
বিপ্লবঃ ধমকইতো বস সব সর্বনাশ করে দিয়েছে।
নেতাঃ নির্দেশ মতো কাজ না করলে, ধমক খাবি নাতো কী?
রোজ এত টাকা দেব কেন, কাজই যদি না করিস। বল কি আবার ঝামেলা বাধিয়েছিস?
বিপ্লবঃ না বস; ঐ শালা সাংবাদিক সাঈদ আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমাদের ক্ষমতা নাকি ওর পাঁচ টাকা দামের কলম দিয়ে নষ্ট করে দিবে।
নেতাঃ (হাসছে) হু হা হা হা..... যা বাড়ি গিয়ে ডাল খেয়ে ঘুমায়। সাঈদ হলো গরিবের ছেলে, ওর এখনও এত বড় বুকের পাটা হয়নি যে আমার মতো নেতার বিরুদ্ধে পত্রিকায় নিউজ করে দেবে। ওদের জায়গা-জমি দখল করে রেখেছি কখনো কিছু বলতে সাহস পায়নি। আবার রিপোর্টিং করবে!!
বিপ্লবঃ বড় আশ্বস্ত করলেন বস। যাই হোক, আপনি স্বতন্ত্র থেকে ভোট করবেন কেন?
পাতা-৪
নেতাঃ আমার দলের ভেতরে কাউন্সিলরদের ভোট হলে ফেল মারব নিশ্চিত। দলের সবাই এখন আমার বিরুদ্ধে; তারা ক্লিন ইমেজের লোক খুঁজছে! স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করব, জোর করে ভোট কেটে জিতলে লোকজন দেখিয়ে আবার দলে যোগ দিবো। যা বিরক্ত করিস না।
বিপ্লবঃ আসি বস। (প্রস্থান)
চতুর্থ দৃশ্য:
পতিতাঃ সাংবাদিক সাব, রিপোর্ট করবেন না?
সাঈদঃ কে, কে তুমি?
পতিতাঃ আমি বাংলায় কথা কই। আরতো কিছু জানি না।
সাঈদঃ বল কি হয়েছে? কি হয়েছে তোমার?
পতিতাঃ কোনডা শুনবেন? মোল্লাগো কথা না ঐ ভন্ড নেতা....! রিলিফ দেবার নামে গোডাইনে নিয়া গিয়া..,.,.,!
সাঈদঃ যা বলবে বল। আমি সব শুনবো।
পতিতাঃ আজ তিনদিন হইলো মৌলভীরা একঘরে কইরা রাখছে। একদিন হলো না খাইয়া আছি। আমারে সগলাই ঘেন্না করে। আমি নাকি খারাপ মেয়ে মানুষ!
সাঈদঃ কে! কে! তুমি!
(সাঈদের ঘুম ভেঙ্গে গেল; সে মনে মনে ভাবলো তার বীরাঙ্গনা মায়ের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা মুক্তিযুদ্ধে যাবার পরে তার মা-কে রাজাকাররা মিলিটারিদের হাতে তুলে দেয়। সাঈদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে।)
তৃতীয় অংকঃ প্রথম দৃশ্য:
[নেতা চেয়ারে বসে দৃষ্টি ক্ষীপ্ত। বিপ্লব ভেতরে ঢুকলো]
বিপ্লবঃ বস এতো জরুরী তলব?
নেতাঃ জরুরী তলব হবে না? এই দেখ হারামজাদা সাংবাদিক কত বড় খবর ছাপিয়েছে!
[পেপার হাতে নিয়ে বিপ্লব]
বিপ্লবঃ ‘তরুণদের ধ্বংস ও নিজেদের অর্থলোভে মদ-গাঁজার জমজমাট আসর। স্থানীয় নেতাদের যোগ- সাযোশে পুলিশ-প্রশাসন নিরব।’ [একটু পরে] বস আমার বাবা রাজাকার সব লিখেছে এখানে!
নেতাঃ দেখ ভালো করে দেখ। এত কিছু করে বসবে তুই যদি আগে আমাকে জানাতি তাহলে ওর হাড়-হাড্ডি গুড়ো করে দিতাম। তুই জানিস এ ব্যাপার ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে সামনে ইলেকশনে দুজনকেই ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ব্যাটা ছোট লোক রিপোর্টার ঘুষ খাবার জন্য এদিক ওদিক করছে। যা আমার কাছে ডেকে নিয়ে আয়।
বিপ্লবঃ যাই বস।
পাতা-৫
নেতাঃ শোন বিপ্লব, সাঈদের কি ধরণের লেখা বেশি পেপারে আসে?
বিপ্লবঃ আমি অত বুঝি না, তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের লেখা অনেকেই পড়েছে। সে লেখা নিয়ে আলোচনাও শুনেছি।
নেতাঃ ঠিক আছে তুই যা। আমি একটু ভেবে দেখি।
(বিপ্লবের প্রস্থান)
দ্বিতীয় দৃশ্য:
[সাঈদকে নিয়ে বিপ্লব]
বিপ্লবঃ লিডার বাহিরে আসেন। আমি সাঈকে এনেছি।
নেতাঃ [বাহিরে এসে] কোথাকার কোন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে! হম, তাছাড়া আদৌ যুদ্ধ করেছিলো নাকি? তা’ ছাড়া তোমার মা’ লোলুপ হায়নার,.,.,.।
সাঈদঃ ব্যস, চেয়ারম্যান সাহেব। আপনাদের মতো নেতারা ইতিহাস বিকৃত করতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই দেশের সাথে বেঈমানি করতে পারব না। একাত্তরে সেদিন কতিপয় নরপশুর সংস্পর্শে আমার মা কলঙ্কিত হলেও আমার মা আমার জন্মের ব্যাপারে কখনও কোন কিছু বলেননি। হতে পারে এ গরীবের জন্য সবার দেয়া ভৎর্সনা!
নেতাঃ যাই হোক নিজের দূর্নাম সবাই ঢাকার ব্যবস্থা করতে চায়। তোমার দোষ দেব না। [পেপার এগিয়ে নিয়ে] তুমি এ সংবাদকে মিথ্যা বলে পেপারে আবার একটি সংবাদ বের করবে। তাও আবার দু’এক দিনের মধ্যে।
সাঈদঃ আমি কি আপনার চাকর?
নেতাঃ দাস বলো আর যাই বলো। এ কাজ তুমি করবে তাও জানি। এখানে আমাদের সম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে। তুমি কেমন টাকায় কাজ কর?
সাঈদঃ টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে চান? আজ যদি টাকার কাছেই বিক্রি হবো, তাহলে কেন এক বেলা না খেয়ে কষ্ট করে রাতের পর রাত জেগে যোগাড় করলাম এসএসসি, এইচএসসি, বি কম এর সার্টিফিকেট। আমার মা অশ্রু সজল চোখে এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়িতে কাজ করে ফিরেছেন। ফর্মফিলআপের টাকার অভাবে দ্-ুএকবার পরীক্ষাও দিতে পারিনি। আমার মা বেতনের টাকা যোগাড় করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। তখন তার সেই চোখের আবেগ বুঝতে পারিনি। মুছে দিতে পারিনি তার চোখের পানি। আজ আপনি আমার মৃত বাবা-মাকে অপমান করলেন? আর আমি.........
বিপ্লবঃ থাক থাক। রাজনীতিতে নামলে তুমি সফলতা পেতে। এত কষ্ট করবে দেশ তোমাকে কী দেবে?
পাতা-৬
সাঈদঃ দেশ আমাকে কী দেবে এটাই বড় কথা নয়। আমি দেশকে কী দেব এটাই বড় কথা। কারণ আমি বাংলাদেশের সন্তান। আমি বায়ান্ন, উনসত্তর আর একাত্তরকে দেখিনি কিন্তু ইতিহাস বইয়ে পড়েছি। আমি বীরাঙ্গনা মায়ের সন্তান, এ আমার গর্ব।
নেতাঃ এই ছেলে তোমার কি জীবনের মায়া নেই?
সাঈদঃ জীবনের মায়া থাকতো যদি কোন ধনীর ঘরে জম্ম নিতাম। এ রকম এক বাস্টার্ড ছেলে যার বাবা-মা ...... তার আবার জীবন কী?
নেতাঃ দেখ সামান্য কারণে কারো কোন ক্ষতি চাই না। তোমার লাশ নিয়ে মিছিল হোক তা’ আমি চাই না। তুমি বিয়ে-শাদী করে অন্য এলাকায় চলে যাও। আমার এলাকায় থেক না।
সাঈদঃ হা হা হা (হাসি দুখের) বিয়ে! হ্যাঁ একবার বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। জম্ম পরিচয় আর দারিদ্রের আঘাতে তা’ বিচূর্ণ হয়ে গেল। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এ আমার দুর্বলতম স্থান। আপনি সেখানে আঘাত করেছেন। সমাজে-পরিবারের জন্ম পরিচয়ের কাছে সবই তুচ্ছ। এ কাজ আমি কখনই করিব না! (প্রস্থান)
(,.,.,.,.,.,.,.,,,,,,,,,,,,.,. গানের সুর সবাই চুপ, মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে।)
নেতা: এ দেখছি, একগুঁয়ে, নেই আকড়া রিপোর্টার। এর জন্য ব্যবস্থা করতেই হবে। কিন্তু সংবাদপত্রের কর্মীর কিছু হলে হট্টগোল বেধে যাবে। বিপ্লব, তুই যা সাঈদ যে পত্রিকায় চাকুরি করে, সেই পত্রিকার প্রকাশককে আমার কথা বলবি। সাঈদ যে নিউজগুলো সম্পাদকের কাছে পাঠায় তার প্রতিটি যেন আমাকে দেখিয়ে প্রকাশ করা হয়। ওই পেপারের মালিক আমার খুবই পরিচিত, আমরা একই পার্টি করি। (হা হা হা হা...)
বিপ্লব: যাচ্ছি বস, আমার নাম যদি বিপ্লব হয়ে থাকে তাহলে দেশে সত্যি সত্যি বিপ্লব ঘটিয়ে দেব। (প্রস্থান)
তৃতীয় দৃশ্য: (সাঈদ ও আবেদ)
সাঈদ: কবিতা পড়েন আবেদ ভাই? রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দ, সামসুর রহমান...
কবিতায় আর কি বলব?
যখন বুকের রক্তে লিখেছি
একটি নাম
বাংলাদেশ।
আবেদ : কি হয়েছে সাঈদ?
সাঈদ : আত্মহত্যা কি মহাপাপ? শুনেছি আত্মহত্যা করলে বেহেশতে যাওয়া যায় না।
আবেদ : হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। কিন্তু এসব কথা উঠছে কেন? বুঝেছি আবারও কেউ মা’র কথা তুলে তোমার মনে আঘাত দিয়েছে। তাহলে শোন কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সঞ্চিতা’র কাব্যগ্রন্থের ‘বারাঙ্গনা’ কবিতাটি পড়ে দেখ। এই কবিতায় কি কবি লিখেছেন কবি জানো?
সাঈদ: না আবেদ ভাই। বলেন তো শুনি।
পাতা-৭
আবেদ: ‘‘অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয়
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়!!’’
সাঈদ তবে তুমি কেন একা হতে যাবে জারজ? যে ব্যক্তি অসৎ তা’র সন্তান মাত্রই জারজ সন্তান। নিজেকে এত অসহায় কেন ভাব? তোমার সাথে তারাও জারজ যারা অসৎ পিতার সন্তান। কবি নজরুলের সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত।
দেখ সাঈদ আমাদের সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ শুধু নারীদের দোষই খুঁজতে জানে। তোমার মা-কে পাক-মিলিটারিদের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। দোষ কি তোমার মায়ের? তোমার বাবা দেশমাতৃকা রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। সেজন্য তোমার মা’র উপর এই নির্যাতন! মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে তোমার যুদ্ধাহত বাবা দেশে ফিরেছেন। তারপর বছর খানেক পরে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। তোমার জন্ম তারপরে। মানুষ তোমাকে জারজ বলে কেন? মানুষের তো তোমাদের উপর সদয় হওয়া উচিৎ ছিল।
সাঈদ: ভাই আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। (জোরে)
পৃথিবীতে আমি একা জারজ নই, সাথে সমস্ত অসৎ পিতার সন্তানরাও জারজ। (প্রস্থান)
আবেদ: আরে সাঈদ! সাইদ!! (প্রস্থান)
চতুর্থ দৃশ্য:
বিপ্লব : এই নিন লিডার, প্রকাশক সাহেব পাঠিয়েছেন। সাঈদের তৈরী করা রিপোর্ট।
নেতা : কি, পড়েছিস?
বিপ্লব : (হাসানোর ভঙ্গিতে) বস আপনি আমাকে ছেড়েই করলেন। একটুও মনে পড়ল না আমার
কথা, যে আপনার সাথে এতদিন ধরে আছে!
নেতা : কি বলতে চাস তুই?
বিপ্লব : দ্যাখেন বস। (ছবি ও খবর হাতে)
নেতা : কি! আমার নামে এত বড় কলঙ্ক? আমি ভেবেছি ওকে বাঁচিয়ে দেব। কিন্তু না ওকে আমি
অনেক বড় শিক্ষা দেব। বলে কি না আমার সাথে বহু মেয়ের অনৈতিক সম্পর্ক! আবার ছবিও
তুলেছে! ওকে ওয়াজ দোব, যাতে ওরে আওয়াজ হয়। (্উত্তেজিত ভঙ্গিতে)
কিন্তু এই ছবি তুলেছে কে? এই ছবি থাকলে আমার সামনের নির্বাচন! কিরে বিপ্লব কথা বলিস না
কেন? (শান্ত ভঙ্গিতে) বিপ্লব তুই বিপ্লব ঘটাবি না?
বিপ্লব : হ্যাঁ আমি যদি বিপ্লব হই, তবে ডাবল বিপ্লব ঘটিয়ে দেবই দেব।
নেতা : তবে যা হারকোলালকে নিয়ে যা। (বিপ্লবের প্রস্থান)
এই রিপোর্টার আমার জাতশত্রু। আমার বিরুদ্ধে যেভাবে লেগেছে তাতে! আমার সাথে সাঈদের
অনেক আগের কিছু রয়েছে! সে কি শোধ নিতে চাইছে? তার জায়গা জমি, অন্য কিছু? আমার
আগেই সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।
পাতা-৮
চতুর্থ অংক: ১ম দৃশ্য (সাঈদ ফাঁকা রাস্তায় একা চলছে, হারকোলাল দাঁড়িয়ে। খুনীকে আড়াল করতে
হারকোলাল একটি প্রতীকি নাম মাত্র)
হারকোলাল: দাঁড়া।
সাঈদ : কে কে তুমি! কি চাও এত রাতে? আমি বাড়ী যাব পথ ছাড়।
হারকোলাল: দাঁড়া বাড়ি যাবি কেন? আমার পরিচয় নিবি না? আমার পরিচয় তুই তখনই পাবি, যখন
তোর শরীরে আঘাত লাগবে।
সাঈদ : (মাটিতে লুটিয়ে পড়ে) আহ্ মাগো পারলাম না বাঁচতে।
হারকোলাল: যে বাসবে ভালো দেশ, পাবে না কোন কিছুর লেশ। আমার পরিচয়, আমি খুনি! আমি
খুনি!! (প্রস্থান)
* এক সাগর রক্তের বিনিময়ে..... (গান)
২য় দৃশ্য:
গোয়েন্দা বসে আছে। আসতে পারি? (দরজায় টোকা)
মাসুদ রানা : কে? ভেতরে আসুন।
নেতা : আমি রাজা চৌধুরী বাহাদুর।
মাসুদ রানা : বসুন; দেখেন দেখি কান্ড। সে সাংবাদিকের মাধ্যমে আমরা সবকিছু জানতে পারি
তাকেই আঘাত করা হয়েছে। যাই হোক, আমি মাসুদ রানা। স্পেশাল ব্রাঞ্চে আছি। বাবা আপনার
কথা আমাকে বলেছেন। সাঈদ হত্যার রহস্য উদঘাটনে এখানে এসেছি।
নেতা : জ্বী আমি সব জানি। (মুখে হাসি) আপনি এ পেশায় প্রবীন নন। তা’ আপনার মাসুদ রানা
নামের রহস্য কি জানতে পারি?
মাসুদ রানা: হ্যাঁ পারেন বৈকি। আমার পিতা প্রদত্ত নাম রানা চৌধুরী। গোয়েন্দাগিরি পেশায় যখন
নেমেছি নামটা গোয়েন্দাদের মত না হলে কি চলে?
নেতা : আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়, মি. মাসুদ রানা। তবে এত বড় নাম ধরে আমি
আপনাকে ডাকতে পারব না আপনাকে মি. রানা বলেই ডাকব।
রানা : অহ!!! শিউর।
নেতা : শুভকামনা! আসি আজ, তবে যে কোন প্রয়োজন হলে স্মরণ করবেন। আমরা আপনার
সেবায় পাশে আছি। সাঈদের হত্যার রহস্য উন্মোচিত হোক।
পাতা-৯
৩য় দৃশ্য:
বিপ্লব : বস এই গোয়েন্দা এসেতো অসুবিধাই হল।
নেতা : হ্যাঁ ও খুব ধূর্ত অফিসার।
বিপ্লব : ওকে কে পাঠাল?
নেতা :ও ধনীর ঘরের ছেলে। কখন যে কি খেয়াল হয়। বিদেশে ছিল অপরাধবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছে।
এক সময় সাংবাদিক ছিল মনে হয়। দেশে এসে ইচ্ছা হল, সাংবাদিক হত্যার রহস্য খুঁজে বের করবে
স্পেশাল এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চলে এল।
বিপ্লব : বস! আমি শুনেছি, ও এতদিনে এলাকায় যা হয়, সব খবর সংগ্রহ করছে। অনেকটা পথ
এগিয়ে গেছে। কিন্তু আপনার মত নেতা ওকে এভাবে!!
নেতা : আহ সে যন্ত্রণাতেই মরছি। ছেলেটা ব্রিলিয়ান্ট পুলিশ অফিসার। আর ওর বাবাও একজন
প্রভাবশালী ব্যবসিক ও জার্নালিষ্ট। উনার সাথে পরিচয় ছিল একসময়ে, উনি আমাকে সৎ
বলেই জানেন। আর তাই ছেলেকে এ এলাকায় পাঠিয়েছে। এই যে চিঠি পড়, তাহলেই সব
বুঝবি।
বিপ্লব : (পড়ার পর) ঐ ব্যক্তি বুঝেছে এ কাজ যে কোন ব্যক্তি করেছে। আপনি করেন নাই। নেতা : আর স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে। আমার ছেলেকে দেখে রাখবেন, যেন কোন ঝামেলা না হয়।
বিপ্লব : এতদিনে বুঝলাম বস, ক্ষমতার উপরে ক্ষমতা আছে। সাঈদের সাথে যেমনটি আচরণ
করেছেন। রানার সাথে তেমনটি পারছেন না। ওকে ঘুষ অফার করলে কেমন হয় বস?
নেতা : ভালো বলেছিস। চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তবে কাজ হবে বলে মনে হয় না। ও এটা
শখের বশে করছে। যদি সফল হয় তবেই ওর প্রশান্তি। তবে ওর এক শর্ত রয়েছে, সেটা হল
যদি কাজটি এক মাসের মধ্যে শেষ হয়। এক কেসে তো আর সারাজীবন কাটালে চলবে না।
বিপ্লব : পেয়েছি বস! ও এক মাসের মধ্যে কাজটি যেন না করতে পারে, সে ব্যবস্থাই করে দোব।
নেতা : যদি পারিস খুবই ভালো হয় যা এক্ষনি যা।
বিপ্লব : আমার নাম বিপ্লব হলে বিপ্লব ঘটিয়েই দেব। যাচ্ছি বস! (প্রস্থান)
নেতা : যতই চাল চালো, এ রানা গোয়েন্দাকে বশে বড়ই দু:সাধ্য। ওকে ওয়াজ দিলে আওয়াজ বেরুবে না। তাই যা ব্যবস্থা তা’ আমাকেই করতে হবে।
৪র্থ দৃশ্য:
রানা: সাঈদ খুন হয়েছে নীরব, নিভৃতে, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউই দেখেনি ওকে। বার কোটি বাঙালির একজনও মৃত্যুর সময় ওর ডাকে সাড়া দেয়নি; তাই ওকে এভাবে একা মরতে হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে, বীরাঙ্গনার ছেলে স্বাধীন দেশে খুন হয়ে গেল।
(আবেদের প্রবেশ)
আবেদ : কে মারা গেল মি. মাসুদ রানা?
পাতা-১০
রানা : কে আপনি?
আবেদ : আমি সাঈদের সিনিয়র কলিগ। আমার নাম আবেদ রহমান।
রানা : ও আপনার কথা আমি শুনেছি। আবেদ ভাই আপনাকে বিশেষ প্রয়োজন।
আবেদ : নিশ্চয়ই, সাঈদ হত্যার যে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে আমি আপনার পাশে আছি। তবে
একটু সাবধানে নইলে আবেদ রহমান সাঈদ হয়ে যাবে। আমি অনেক কিছুই জানি সময় হলে সব বলব। (বাহিরে ঠক ঠক শব্দ)
রানা : কে?
কন্ঠ : রাজা সাহেব এসেছেন, বাহিরে আসুন।
আবেদ : আমিও আসি ভাই। (প্রস্থান করল রানাও)
৫ম দৃশ্য:
বিল্পব : বস গোয়েন্দার এক মাসের সময় প্রায় শেষ। আমি একটা কাজ করে এসেছি, যা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
নেতা : বল দেখি শুনি। নদীর জল কিভাবে তেষ্টা মেটায় মানুষের!
বিল্পব : যে হিন্দু মেয়ের সাথে আপনার ছবি পেপারে ছাপা হয়েছিল, সে আতœহত্যা করেছে। এমন
কৌশলে কাজ করেছি যা দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না, এটা হত্যা না আত্মহত্যা!
নেতা : তোরা মাঝে মাঝে এমন সব ঝামেলা বাধাস না! গণেশ উল্টে গেলে সমাধান আমাকেই
করতে হয়। যাই হোক করেই যখন ফেলেছিস। তা’ যেভাবেই হোক এখন দেখতে হবে।
এবার মি. মাসুদ রানা একমাস শেষ হল, প্রায় রহস্য বের করার কি হল?
বিল্পব : বস সব শুনেছি। ঐ মেয়েকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা; তাইত...
নেতা : (ও হাঁ হাঁ হাঁ) চল আনন্দ করি। (প্রস্থান)
৫ম অংক: ১ম দৃশ্য
রানা : কি ব্যাপার আবেদ ভাই, এই দু-তিন দিন আপনাকে দেখাই গেল না।
আবেদ : জরুরী কাজে বাইরে ছিলাম। তা শুনেছেন তো মাধবী আত্মহত্যা করেছে?
রানা : হ্যাঁ শুনেছি। এতে এই হত্যা রহস্য উন্মোচনের ক্ষতি হয়ে গেল।
আবেদ : ক্ষতি হয়েছে, কাজের সময়ও এসেছে। এই যে সাঈদের ডায়েরী। রাখুন এটা কাজে লাগবে।
রানা : এটা পেলেন কোথায়?
আবেদ : সাঈদ যে দিন খুন হল, ঠিক সেদিন এটা আমি আমার কাছে এনে রেখেছি। জানতাম এটা
এক সময় কাজে আসবেই। শুধু অপেক্ষা করছিলাম একজন চৌকস ও নির্ভরযোগ্য অফিসারের জন্য। তাই এতদিন আপনাকে ডায়েরী দেইনি। ও হ্যাঁ আপনি কি মাধবীদের বাড়ীতে গিয়ে আত্মহত্যার কোন আলামত খুঁজে পেয়েছেন?
পাতা-১১
রানা : আমি হলাম গোয়েন্দা, দশ চোখ আমার। কাকে এ্যারেস্ট করব, সব ঠিক-ঠাক। রাজা
সাহেব ও চিঠি দিয়েছেন, কেবল আপনি নাই তাই দেরি হচ্ছিল। আপনি হলেন লোকাল
মানুষ। আপনার সাথে কথা বলে অনেক সমীকরণ সহজে মেলানো যায়।
আবেদ : তা’ কাকে গ্রেফতার করবেন বলে ঠিক করলেন।
রানা : তা’ বলব না। তবে সাংবাদিক মানুষ গ্রেফতার পর নিউজ করার জন্য অবশ্যই বলব। তা’
সাঈদের ডায়েরীতে কি তথ্য দেওয়া আছে?
আবেদ : তেমন কিছু নেই। আবার অনেক কিছু রয়েছে। এটা গোয়েন্দা দৃষ্টিভঙ্গিও ব্যাপার! আমি
বুঝব কি করে? ভাই আশা করি আগামীকালই গ্রেফতার হচ্ছে সাংবাদিক হত্যার আসামী।
রানা : ও শুধু সাংবাদিক হত্যা কেন? আরো খুন, লুট, চাঁদাবাজির মামলারও আসামী। মাধবীর
মায়ের সাথে কথা বলে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছি। মুখ খুলতে চাইছিল না; কৌশলে
কাজটি করতে হয়েছে।
আবেদ : তাহলে কালই বোঝা যাবে কি হতে চলেছে! (প্রস্থান)
২য় দৃশ্য
হারকোলাল: বস, আসব?
নেতা : আয় হারকোলাল।
হারকোলাল: খবর আছে বস; ঐ গোয়েন্দা জেনে গেছে এই হত্যাগুলির জন্য আমরা দায়ী। এখন
গ্রেফতার করবে।
নেতা : আমি জানতাম গোয়েন্দা সব তথ্য বের নিবে। তাই আগেই বিপ্লব যে খুনী তার প্রমাণসহ
লিখে দিয়েছি। গোয়েন্দার চোখ আমাদের চোখের ফারাক অনেক। দেখ সাড়া জীবন কত
কি করলাম; শেষ জীবনে এসে কি সব হচ্ছে।
হারকোলাল: আপনি গোয়েন্দার কাজে সাহায্য করলেন বস?
নেতা : না আমি সাহায্য করতে যাব কেন? গোয়েন্দা সব জেনে ফেলেছে। আমাকে গ্রেফতার
করবে? তাই বাধ্য হয়ে নিজেকে বাঁচাতেই আমার এই পথ! আজ রাতের ট্রেনে ঢাকা যাব।
বিপ্লব এলে বলবি স্টেশনে অপেক্ষা করতে। ওখানে ওকে গ্রেফতার করবে মনে হয়।
হারকোলাল : আপনি জেনে শুনে এত বড় বিশ্বস্ত ছেলেকে বিপদে ফেললেন? যে আপনার জন্য মানুষ
খুন করতেও দি¦ধা করে না। তার মানে আবার কোন বিপদে তুই আমাকে ফাঁসাবি।
তোকে তোর আর আমি ছাড়বো না।
পাতা-১২
নেতা : কি করবি তুই? তুই জানিস না একাত্তরের আগে আমি কি ছিলাম? তুই আমার সবচেয়ে পুরাতন লোক। তাই তো তোকে সব কথা বলেছি; তোকে দিয়েই তো আমি দীর্ঘদিন সব কাজ করাই। তোকে বাঁচিয়ে আমি বিপ্লবকে ফাঁসালাম; আর তুই আমাকে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলছিস? তোর মতো কুত্তাকে আমি চরম শিক্ষা দেব। আহ! আ: আ:
৩য় দৃশ্য
রানা : বিপ্লব, বিপ্লব...
বিপ্লব : আরে রানা সাহেব যে কোথায় যান?
রানা : হুমায়ুন কবির বিপ্লব, তুমি আর বিপ্লব ঘটতে পারবে না।
বিপ্লব : কি যে বলেন রানা সাহেব, নাম যদি আমার বিপ্লব হয়ে থাকে তবে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবই
দেব।
রানা :তোমায় গ্রেফতার করা হ’ল। পালাবার চিন্তুাও করোনা; ট্রিগার টিপলেই গুলি বের হয়ে যাবে।
আইন বিপ্লবকে নিয়ে এবার বিপ্লব ঘটাবে। (বিপ্লবকে ঘিরে ধরেছে)
বিপ্লব : আমায় যে ব্যাটা হুকুম দিল, ঐ শালা। শালাদের গ্রেফতার করবেন না গোয়েন্দা স্যার?
রানা : তাকে গ্রেফতার করার হুকুম আপাতত আমাদের কাছে নেই। তবে সাক্ষী প্রমাণ পেলে
আইন তাকেও ছেড়ে দেবে না। তারাও আইনের উদ্ধে নয়।
আবেদ : তাকে এখন আর গ্রেফতার করতে হবে না। গত রাতে হারকোলালের লাশ পাওয়া গেছে।
রাজা চৌধুরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছে তিনি ঢাকা রয়েছেন।
আমার সন্দেহ যা ছিল! (মাসুদ রানার চোখের দিকে তাকিয়ে)
রানা : তাকেও আমরা গ্রেফতার করার চেষ্টা করব।
বিপ্লব : এভাবেই বোধ হয় সৃষ্টির আদি থেকে বাঘা বাঘা সমাজপতিরা সবার ধরা ছোঁয়ার উর্দ্ধে।
বাংলার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ; স্বাধীনতা বিরোধীরা
সমাজপতি হয়ে নব্য জন্ম নেয়। অপরাধ করে, অপরাধের পেছনে থেকেও তারা সব সময়ই
নিস্কলুষ।
- নাটক সমাপ্ত হল কি? -
পাতা-১৩